সোশ্যাল মিডিয়ার ফাঁদ: Information Overload, FOMO, Comparison

প্রতিদিন গড়ে ৯০ মিনিট, বছরে ২২ দিন! কি ভাবছেন? হ্যাঁ, এই এত্তগুলা সময় মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে ব্যয় করে । ভাবুন তো, এত সময় আমরা কী করি? বেশিরভাগই থাকে ফটো, ভিডিও, খবর, আর অন্যের জীবনের গল্প। কিন্তু, সত্যি বলতে, এই ৯০ মিনিটের বেশিরভাগ সময় আমরা কিছু শিখি না। বরং ইনফরমেশন ওভারলোড, FOMO, আর তুলনায় ফেঁসে গিয়ে নিজেদের আরও বিভ্রান্ত করি।

ইনফরমেশন অভারলোড: মাথা আওলাই দেওয়ার এসেট

ধরুন, একদিনের কথা বলি। আপনি একটু ইনস্টাগ্রামে ঢুকলেন। প্রথম পোস্টে দেখলেন আপনার বন্ধুর বিদেশ ট্যুরের ছবি। পরেরটা চাকরির সাফল্যের খবর। এরপর একটা হেলথ টিপস ভিডিও। তারপরে মিম। আর এরপর নিউজ—“বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়!”

আপনার মস্তিষ্ক এইসব হজম করতে গিয়ে পুরো হ্যাং হয়ে যায়। এত তথ্য, এত ভিন্ন ভিন্ন বিষয়—আপনার মন একসঙ্গে এসব নিতে পারে না। কিন্তু স্ক্রল থামে না। সোশ্যাল মিডিয়া জানে, আপনি কৌতূহলী। তারা জানে, “আরেকটা পোস্ট দেখো, এটা মিস করলে কিন্তু কিছু মজার বিষয় মিস হবে!”

এর ফল কী?

মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়। মাথা ভারী লাগে। দিনের শেষে মনে হয় কিছুই করলাম না। কিন্তু কাজের কিছু শিখতেও পারলাম না। এটা এমন একটা অদৃশ্য ক্লান্তি, যেটা আমরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ধরে নিই।

FOMO: সবাই মজা করছে, আমি পিছিয়ে যাচ্ছি!

এবার ধরুন, রাতে ফেসবুকে ঢুকলেন। আপনার এক বন্ধু রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছে। অন্যজন পাহাড়ে ট্রেকিং করছে। আরেকজনে নতুন গ্যাজেট কিনছে। আপনার চারপাশে তখন কেমন যেন শূন্য লাগে। মনে হয়, “সবাই কত কিছু করছে, আর আমি এখানে বসে আছি!”

এটাই FOMO বা Fear of Missing Out। এই ফাঁদে আমরা সবাই কখনো না কখনো পড়ি। মনে হয়, অন্যরা সবকিছু উপভোগ করছে আর আমরা জীবনে পিছিয়ে পড়ছি।

কিন্তু সত্যিটা কী?

যে বন্ধু রেস্টুরেন্টে গিয়েছে, সে হয়তো তার ওভারটাইমের টাকায় স্রেফ একটু স্বস্তি পেতে গিয়েছে। যে পাহাড়ে গেছে, সে হয়তো তার ব্যক্তিগত জীবনের চাপ থেকে পালাচ্ছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের শুধু তাদের ‘হাইলাইটস’ দেখায়। ব্যাকস্টেজের গল্প আমরা দেখি না।

তুলনা: আমি কেন ওর মতো নয়?

এই বিষয়টা বেশ মজার। ধরুন, ইনস্টাগ্রামে ঢুকেই দেখলেন, কেউ নতুন গাড়ি কিনেছে। আরেকজন সকালে জিমে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই নিজের জীবনের সঙ্গে তাদের তুলনা করতে শুরু করলেন। মনে হলো, “ওরা কত কিছু করছে, আমি কেন কিছু করতে পারছি না?”

তুলনা করা আমাদের স্বভাব। আমরা নিজেদের অন্যদের সঙ্গে মেলাই। কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখবেন—সোশ্যাল মিডিয়ায় যা দেখা যায়, তার ৯০% হয় মিথ্যে নয়ত অসম্পূর্ণ।

যে নতুন গাড়ি কিনেছে, সে হয়তো তার ইএমআই নিয়ে চিন্তায় ভুগছে। যে জিমে গিয়েছে, সে হয়তো রাতে বাইজেড খাবার খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু আমরা তাদের ছবি দেখে ভাবি, তাদের জীবন কত সুন্দর আর নিজেরটা কত সাদামাটা।

 

তাহলে এখন কী করা যায়?

এখানে একটা কথা বলা দরকার—সোশ্যাল মিডিয়ার কাজই হলো আপনাকে আটকে রাখা। ইনফরমেশন ওভারলোডে আপনি ক্লান্ত হবেন, FOMO-তে আপনার মনে হবে আপনি পিছিয়ে পড়ছেন, আর তুলনায় আপনি হতাশ হবেন। আর এভাবেই তারা বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা কামায়।

কিন্তু এর একটা পথ আছে।

একটু চেষ্টা করে স্ক্রল করার সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, “আমি কি কিছু শিখছি? নাকি শুধু সময় নষ্ট করছি?” যখন ভাববেন, তখন দেখবেন মাথাটা ধীরে ধীরে হালকা লাগছে।

আর FOMO? নিজেকে একবার বলুন, “আমি যা করছি সেটাই যথেষ্ট।” আপনার জীবন অন্যের মতো না হওয়াই স্বাভাবিক।

আর তুলনা? এটা থামাতে হলে, একটু থেমে নিজের জীবনটাও দেখুন। কী কী করেছেন? কী অর্জন করেছেন? মনে রাখুন, আপনার জীবনের ছোট্ট সফলতাও অন্য কারো জন্য বড় ব্যাপার হতে পারে।

সব শেষে, সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করলেই জীবন থেমে যায় না। বরং মাঝে মাঝে ফোনটা এক পাশে রেখে নিজের শখ নিয়ে ব্যস্ত হন। এটা কোনো কঠিন কাজ নয়। আপনি শুধু একটা চেষ্টা শুরু করুন। দেখবেন, আপনার মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে স্বস্তি পেতে শুরু করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে যা করছেন, সেটাই আসলে জীবনের আসল মজা। এন্ড ইয়েস, থ্যাংকস দেওয়ার দরকার নাই; জাষ্ট মাইনা চলি বিষয়গুলা, ইউর লাইফ উইল থ্যাংক ইউ ।

About the author

Tahsan Sumon
Tahsan Sumon

A Full-Stack Designer, Writer, and Consultant with over 5 years of experience in clarity-first design, storytelling, and emotional resilience. Creator of The SYNARA Framework.

Add comment